শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : বাংলাদেশের পথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মূলত বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত (বিবি আইএন) মোটরযান চুক্তির (এমভিএ) পর এই সম্ভাবনা আরো বেড়েছে। গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরাতে সফলভাবে পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। ভারতের সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অনলাইনে গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের কলকাতা থেকে আগরতলা পর্যন্ত রুট পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরার দূরত্ব নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। ফলে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বিবি আইএন এমভিএন চুক্তিতে বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া ও নেপালের মধ্যে এমভিএন চুক্তি হয়। এরপর ওই মাসেই কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সড়কপথে বাস সেবা চালু হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতাকা উঁচিয়ে ঢাকা-শিলং-গোয়াহাটি বাস সেবা চালু করেন। যদিও এই বাস সেবা এখনো নিয়মিতভাবে চালু হয়নি। ১৯৯৯ সালের জুন থেকে কলকাতা-ঢাকা বাস সেবা চালু হয়। আর ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আগরতলা-ঢাকা বাস সেবা চালু হয়েছে। ১৯৪৭ সালের আগে গুয়াহাটি থেকে বাংলাদেশের লালমনিরহাট হয়ে কলকাতা যাওয়া হতো। দেশভাগের পর আসাম-কলকাতা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ট্রেন যোগাযোগ ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এরপর ২০০৮ সালে কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়। তবে তার সুফল তেমন পাওয়া যায়নি।
তবে প্রায় সাত দশক পর আবারো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে কলকাতা-আগরতলা ট্রেন যোগাযোগ চালু হচ্ছে। বাংলাদেশের আখাউড়া হয়ে আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে ভারত। এই পথের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার ভারতের ওপর দিয়ে যাবে। আর বাকি পথ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাবে। এই রেলপথের নির্মাণকাজ ২০১৭ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পথ নির্মাণ হলে কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব হবে ৪৯৯ কিলোমিটার। তবে বর্তমানে কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে ১ হাজার ৫৯০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। যাতায়াত করতে হয় বাহাদুরপুর, লুমদিয়া, গুয়াহাটি ও নয়া জলপাইগুড়ি পথে।
আগরতলা-আখাউড়া রেলসংযোগও আঞ্চলিক যোগাযোগ ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এটি হবে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের (টিএআর) একটি প্রকল্প। ভারত-বাংলাদেশ এখানে অর্থায়ন করবে। এর দূরত্ব হবে ৩৫০ কিলোমিটার। ১৮৪৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে গুয়াহাটি ও ধিরুগড়ে যাতায়াত শুরু করে। তবে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর এই পথে যোগযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে গত কয়েক বছর আগে এই পথে জলযান চলাচল শুরু করেছে। জলপথে জাহাজে করে আসামে ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যেতে ঢাকার সঙ্গে আইল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে দিল্লি।
ভারতের ফরেন ইনভেস্টমেন্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফআইসিসিআই)-এর উত্তরপূর্ব পরামর্শক পর্ষদের চেয়ারম্যান রণজিৎ বারঠাকুর বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বড় বাধা ছিল। সেটা এখন সরে যাচ্ছে। আইল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড প্রটোকলের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরকেও ব্যবহার করা যাবে। ভারতের ফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স অব নর্থইস্টার্ন রিজিওনের (এফআইএনইআর) চেয়ারম্যান আর এস জোসি বলেন, সড়ক, রেল, নদী, সমুদ্র, ট্রান্সমিশন লাইন, পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ও প্রযুক্তিগত সংযোগ বাড়লে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের ব্যাপক অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করা যাবে। এমন সম্ভাবনা আগে কখনো সৃষ্টি হয়নি।